• সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

মেয়াদ শেষ হলেও চালু হয়নি কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আমাদানিকৃত যন্ত্রপাতি পড়ে আছে খোলা জায়গায়

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০৭ আগস্ট ২০২৩

আকরামুজ্জামান আরিফ, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের জানুয়ারী মাসে একনেক বৈঠকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশের পর প্রায় ৩ বছর অতিবাহিত হলেও চালু হয়নি কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল । আমাদানিকৃত যন্ত্রপাতি এখনো বাক্সবন্দী । ব্যবহার না করলে যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা ।
ইতোমধ্যে তিন দফা সময় বাড়ানো হয়েছে । এরপরও অজ্ঞাত কারনে নির্ধারিত সময়ে চালু হয়নি কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ১০ তলা ফাউন্ডেশনের ৫শ’ শষ্যা হাসপাতালের ৭তলা ভবন নির্মান সম্পন্ন হলেও আনুষাঙ্গিক বহু কাজ অসমাপ্ত থাকায় সর্বশেষ বর্ধিত সময়েও হলো না ভবন হস্তান্তর। এদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গাফিলতি—দীর্ঘসূত্রিতায় চাহিদার ৬০ ভাগ আমদানিকৃত কোটি কোটি টাকার মেডিকেল যন্ত্রপাতি—সরঞ্জাম পেঁৗছালেও তা বাস্তাবন্দী অবস্থায় পড়ে আছে কয়েক মাস ধরে।
খেঁাজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর একনেক সভায় এই প্রকল্পের সংশোধিত ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি ) বাস্তবায়নে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সর্বশেষ বর্ধিত সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। এরআগে প্রকল্পের মেয়াদ উত্তীর্ণ ও তা অনুমোদনের পর অর্থ বরাদ্ধ বিলম্বের কারনে ২০২১ থেকে নভেম্বর থেকে পুরো এক বছর বন্ধ ছিল প্রকল্পের কাজ। এছাড়া অনিয়ম বহির্ভুত প্রকল্পের ডিজাইন পরিবর্তনে অডিট আপত্তিসহ অন্যান্য জটিলতা কাটিয়ে প্রশাসনিক আদেশ পেতে আরো এক বছর ঝুলে ছিল প্রকল্পটি। পরবর্তীতে জটিলতা নিষ্পত্তির পর প্রকল্পের কাজ এগুলোও তা এখনো দেখেনি আলোর মুখ। বর্ধিত সর্বশেষ সময়সীমা ২০২৩ সালের ৩০ জুন অতিক্রমের পর ফের ছয় মাস সময় চেয়ে তা অনুমোদনে সরকারের উচ্চ মহলে চলছে দেন-দরবার। ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়াতে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের উপসচিব শিরিন আখতার স্বাক্ষরিত পত্রে সুপারিশ করা হয়।
উল্লেখ্য ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্পটির ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । ২০১১ সালে স্থাপিত মেডিকেল কলেজটি অস্থায়ী ভবন থেকে স্থানান্তরের পর ২০২২ সালের ৩ মার্চ মূল ক্যাম্পাসে একাডেমিক—প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু হয়। কিন্তু হাসপাতাল ভবনের ডিপিপি সংশোধন, প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম—গাফিলতি ও তদারকি প্রতিষ্ঠান গনপূর্ত বিভাগের উদাসীনতায় বার বার সময় বাড়িয়েও বাস্তবায়ন হয়নি প্রকল্পটি। ছয়টি ব্লকে বিভক্ত বৃহদায়তনের হাসপাতাল ভবনটি এখন দৃশ্যমান হলেও ১৯টি লিফট স্থাপনসহ বিদ্যুত,পানির রিজার্ভ ট্যাংক, মেডিকেল গ্যাস প্লান্ট, সেন্ট্রাল এসি ও জরুরী বিভাগের সামনে পাকা সড়ক নির্মানসহ আনুসাঙ্গিক বহু কাজ অসমাপ্ত। এছাড়া ভবন হস্তান্তর না হওয়ায় ওয়ার্ড—কেুবিনের বেড ও ১৬টি অপারেশন থিয়েটার, সিসিইউ—আইসিই্উ,অর্থোপেডিক, নিউরোলজি,নেফ্রোলজি,কার্ডিওলোজি,গাইনী, চক্ষু ও নাক,কান—গলাসহ অন্যান্য বিভাগের জন্য আমদানী এমআরআই, সিটি স্ক্যান,আলট্রাসাউন্ড ও এক্স্ররে মেশিনসহ বিদেশ থেকে আমদানী চাহিদার ৬০ ভাগ কোটি কোটি টাকার যন্ত্র—মেডিকেল সরঞ্জাম পড়ে আছে বাক্স্রবন্দী অবস্থায়। ৬৮২ কোটি টাকার প্রকল্পটির মধ্যে ৪,৮৫ কোটি টাকায় একাডেমিক ভবন, ছাত্র—ছাত্রী হোষ্টেল ও ডরমেটরিসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মান সম্পন্ন হলেও হাসপাতালটি এখনো হয়নি চালুর উপযোগী।
প্রকল্পটি তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জানান, অর্থ সংকটের কারনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ আরো ছয় মাস সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আউটডোরে চিকিৎসা দেয়ার জন্য্ ।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাক্তার অধ্যাপক মোঃ দেলদার হোসেন জানান, হাসপাতাল চালু বিলম্বের কারনে প্রতিদিন তিন কিলোমিটার দুরত্বে আড়াইশ বেড হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল ক্লাস করতে ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের ভোগান্তি হচ্ছে। এছাড়া এঅঞ্চলের জনগোষ্ঠি উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক ডাক্তার চৌধুরী সারওয়ার জাহান জানান, নির্ধারিত সময়ে ভবন হস্তান্তর না হওয়ায় হাসপাতাল চালুতে বিলম্ব হচ্ছে। আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার পর ৫শ’ শষ্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল চালু করা হবে। তবে এরআগে যত দ্রুত সম্ভব আউটডোর সার্ভিস চালু করা হবে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads